ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে ?

আমদের বাংলাদেশীদের প্রায় অনেকেই ভারত ভ্রমনে যেতে চান।কিন্তু কিভাবে যাবেন,কিভাবে ভিসা আবেদন করবেন,ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগবে আপনি কিছুই যানেন না।তবে এই কন্টেন্টটি পড়ে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

ইন্ডিয়ান-টুরিস্ট-ভিসা-পেতে-কতদিন-লাগে

আমরা অনেকেই ইন্ডিয়া ভ্রমনে যেতে চাই তবে সঠিক তথ্য বা গাইডলাইনের অভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে না।বাংলাদেশ ও ভারত পাশাপাশি দেশ হওয়ার কারনে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের টুরিস্ট ভিসা পাওয়া অনেকটাই সহজ। 

পোস্ট সুচিপত্রঃইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে? 

আপনার যদি ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকে তবে সবার প্রথমে আপনার কাজ হচ্ছে একটি ভিসা তৈরি করা। ভিসা তৈরি করার প্রক্রিয়া অনেকের কাছে সহজ মনে হলেও,ভিসা তৈরি করা অনেকটাই কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ।ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পেতে সাধারণত ৮-১৫ দিন সময় লাগে।কারো কারো ক্ষেত্রে এর কম বেশি ও সময় লাগতে পারে।অনেকেই আবেদন করার এক সপ্তাহের মধ্যেই ভিসা হাতে পেয়ে যান আবার অনেকের এক মাসের ও বেশি সময় লেগে যায়।

ভিসা হাতে পাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নির্ধারণ করা হয় না একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম সময় লাগতে পারে। এটি মূলত হয় ভিসা আবেদনের সময় যেসব তথ্য বা ডকুমেন্ট তারা চায় সেই অনুযায়ী নির্দিষ্ট তথ্য বা ডকুমেন্ট জমা না দিলে ভিসা পেতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। তবে আপনি যদি ই ভিসাতে আবেদন করেন তবে আপনি ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা অতি তাড়াতাড়ি সরবরাহ করতে পারেন এবং ই ভিসায় আবেদন করলে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে আপনার ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পরিচিতি

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা হল এমন একটি ভিসা যা বিদেশী নাগরিক এবং বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতে পর্যটন বা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ভারতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। এই ভিসা সাধারণত এক বা একের অধিক এন্ট্রি সুবিধা নিয়ে বের হয়, যা একাধিকবার ভারতে প্রবেশের সুবিধা দেয়। ই-ভিসা তৈরি করার প্রক্রিয়া অনেকটা সময় সাপেক্ষ হতে পারে।

 ভিসা তৈরীর জন্য আমাদেরকে কয়েকটি ধাপ সফলভাবে পার করতে হবে। যেমন-প্রথমেই ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, ডকুমেন্ট গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা সেগুলো যাচাই করতে হবে এবং সর্বশেষ ধাপ হল ভিসার ইস্যু করতে হবে। এসব কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে প্রদান করলে আপনার ভিসা অতি তাড়াতাড়ি পাওয়া সম্ভব হবে।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট

একটি সঠিক অবৈধ ভিসা পাওয়ার জন্য আমাদেরকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় পত্র ও ডকুমেন্ট প্রদান করতে হবে। এসব তথ্য ও ডকুমেন্ট বৈধ বা সঠিক হলেই আমরা ভিসা হাতে পাব। ডকুমেন্টগুলো হল-
  • পাসপোর্টঃ পাসপোর্টটি অবশ্যই আপনার হতে হবে এবং এটি ছয় মাসের বৈধ পাসপোর্ট হতে হবে।
  • ছবিঃ আপনার কয়েকটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ভিসা আবেদন ফরমঃ ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার জন্য নির্ধারিত একটি আবেদন ফরম রয়েছে। এটি আপনাকে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
  • ভ্রমণের উদ্দেশ্যঃ আমাদের সকলেরই ভ্রমণের কিছু নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সেই উদ্দেশ্যের কথা জানিয়ে একটি ছোট বিবৃতি লিখতে হবে।
ইন্ডিয়ান-টুরিস্ট-ভিসা-পেতে-কতদিন-লাগে

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা আবেদন কিভাবে করবেন

ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে আপনাকে ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। আপনি ঘরে বসে অনলাইনে অর্থাৎ ই-ভিসার মাধ্যমেও আবেদন করতে পারেন। ই-ভিসার মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া খুব দ্রুত এবং সহজতর একটি প্রক্রিয়া যা আমাদের মধ্যে অনেক মানুষই ব্যবহার করে থাকে। যদি আপনি ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা সাধারণভাবে আবেদন করতে চান তবে আপনার নিকটস্থ কোনো ভিসা সেন্টারে গিয়ে আবেদন করতে হবে।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা হাতে পেতে সাধারণত ৮-১৫ দিন সময় লাগতে পারে তবে এটি এক একটি দেশের ক্ষেত্রে একেক রকম সময় লাগতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি ই-ভিসার মাধ্যমে আবেদন করেন তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভিসা হাতে পেতে অনেক সহজ হবে।

জরুরী ভিসার প্রক্রিয়া

আমাদের মধ্যে প্রায় অনেক মানুষের চিকিৎসাগত কারণে এবং গুরুত্বপূর্ণ কারণে অতি দ্রুত ভিসার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে অতি দ্রুত ভিসা হাতে পাওয়ার জন্য ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন হতে পারে। যদি আপনার ভিসা অতি দ্রুত বা জরুরিভাবে প্রয়োজন হয় তবে আপনি এক্সপ্রেস ভিসা ও উত্তরণ ভিসার জন্য বিশেষভাবে আবেদন করতে পারেন।

সাধারণ ভিসার থেকে জরুরী ভিসার প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। জরুরী ভিসার জন্য আপনাকে ৮ থেকে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে না বরং তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই আপনি আপনার ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন। জরুরী ভিসার জন্য এক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত ফি প্রয়োগ করতে হবে।

ভিসা ফি এবং পেমেন্ট পদ্ধতি

ভিসা ফি বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমন- ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় এখানকার ভিসা ফি একটু কম। ভারতীয় ভিসা সেন্টারে আবেদন করার সময় আপনাকে ভিসা ফি প্রদান করতে হবে ।এছাড়াও বিভিন্ন অনলাইন বা ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমেও ভিসা ফি প্রদান করতে পারেন। বিভিন্ন ভিসা ফি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন-

ই টুরিস্ট ভিসা ফি
  • ই-টুরিস্ট ভিসা ফি(৩০ দিনের জন্য)ঃ প্রায় ১০০০০-১২০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
  • ই-টুরিস্ট ভিসা ফি(৬০ দিনের জন্য)ঃ প্রায় ১২০০০-১৭০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
সাধারণ টুরিস্ট ভিসা ফি
  • একবার প্রবেশের ভিসা(৩-৬ মাসের জন্য)ঃ প্রায় ৭০০০-১৩০০০ টাকা খরচ হতে পারে।
  • মাল্টিপল প্রবেশের ভিসা(১ বছরের জন্য)ঃ১৫০০০-১৮০০০ টাকা খরচ হতে পারে। 
  • মাল্টিপল প্রবেশের ভিসা(৫ বছরের জন্য)ঃ১৮০০০-২০০০০ টাকা খরচ হতে পারে।

টুরিস্ট ভিসা বাড়ানোর সুযোগ

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৬ মাস হয়ে থাকে। আপনার ভিসার মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেলে আপনি কোনভাবেই আপনার ভিসা রিনিউ করতে পারবেন না। অর্থাৎ আপনি ইন্ডিয়াতে ছয় মাসের অধিক সময় কোনভাবেই অবস্থান করতে পারবেন না। ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা সাধারণত বাড়ানো যায় না। 
কিন্তু আপনি যদি ইন্ডিয়াতে অবস্থানরত অবস্থায় ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চান তবে আপনি ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসের মাধ্যমে আপনার ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেন। তবে তার জন্য আপনাকে তাদের নির্দিষ্ট কিছু শর্ত সমূহ মেনে চলে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে।

ভিসা সমস্যা কেন হয় এবং সমাধানের উপায়

বিভিন্ন কারণে ভিসা আবেদনের সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যার কারণে আবেদন কারীদের অনেকেরই ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় আপনাকে আপনার নিকটস্থ ভিসা সেন্টারে গিয়ে আপনার সমস্যার সমাধান করতে হবে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো-

ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়াঃ আপনার আবেদন ফরমে যদি আপনি আপনার ভুল তথ্য বা তথ্য অসম্পূর্ণ রেখে আবেদন ফরম জমা দেন তবে আপনার আবেদন বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেমন- আপনার নামের বানান ভুল,পাসপোর্ট নাম্বার ভুল ইত্যাদি।

অপ্রয়োজনীয় বা ভুল ডকুমেন্ট দেওয়াঃ যদি আপনি আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো ভুল দেন তবে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। যেমন আপনার পাসপোর্ট যদি ছয় মাসের কম হয় এবং আপনার ফ্লাইট বা হোটেল বুকিং করার প্রমাণ উপস্থাপন না করতে পারেন তবে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে।

ভিসার মেয়াদ শেষঃ যদি আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে তবে আপনার ভিসা আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।

শর্তাবলী লংঘনঃ ভিসা প্রদানকারী দেশগুলোর নিজস্ব কিছু শর্ত থাকে যা আমাদেরকে মানা অত্যাবশ্যক। যদি আপনি পূর্বে কোন ভিসা শর্ত লংঘন করে থাকেন এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকেন তবে আপনার ভিসা বাতিল হয়ে যাবে।

অপ্রাসঙ্গিক ভিসার আবেদনঃ আপনার উদ্দেশ্যের সঙ্গে মিল রেখে আপনাকে ভিসা আবেদন করতে হবে। আপনি যদি ভারতে কাজের উদ্দেশ্যে যেতে চান কিন্তু আপনি টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করেন তবে আপনার ভিসা বাতিল করা হবে।

যাত্রীর দেশ বা নাগরিকত্ব: কিছু কিছু দেশ রয়েছে যাদের সাথে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। সেসব দেশের নাগরিকদের ভারতের টুরিস্ট ভিসা পাওয়া অনেকটাই কঠিন হয়ে যায় বা ভিসা না পাওয়ার ও সম্ভাবনা থাকে।

অন্যান্য সীমাবদ্ধতাঃ কিছু কিছু সময় ভারতের সরকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দেশের টুরিস্ট বা কাজের ভিসা বাতিল করে থাকে। এটি সম্পূর্ণই রাজনৈতিক কারণে হয়ে থাকে।

ইন্ডিয়ান-টুরিস্ট-ভিসা-পেতে-কতদিন-লাগে

টুরিস্ট ভিসার শর্তাবলী

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলী রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে সঠিকভাবে মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী। টুরিস্ট ভিসা হল পর্যটন বা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে করা ভিসা। টুরিস্ট ভিসায় আপনি ভারতে গিয়ে কোনো রকম কাজ বা ব্যবসায়িক লেনদেনের সাথে যুক্ত হতে পারবেন না। আপনি শুধুমাত্র পর্যটন বা বেড়ানোর উদ্দেশ্যেই ভারতে অবস্থান করতে পারবেন। ভারতে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করা যাবে না।

এছাড়াও আপনার ভিসার নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করা থাকবে। আপনার ভিসার নির্দিষ্ট মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগেই আপনাকে ভারত ছেড়ে দিতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি তিন মাসের মেয়াদে ভারতে পর্যটন করতে যান তবে আপনার ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের একদিন আগেই আপনাকে ভারত ছাড়তে হবে।

ভিসা পাওয়ার পর সাবধানতা অবলম্বন

ভিসা হাতে পাওয়ার পর আপনার ভিসা নিরাপদ ও সাবধানে রাখুন। ভারতে প্রবেশ করার সময় আপনার ভিসা প্রস্তুত রাখুন কারণ ভারতে প্রবেশের সময় ভিসা ছাড়া আপনাকে ভারতে প্রবেশ করতে দিবে না। তাই আপনার ভিসা ভারতের প্রবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার আপনার উদ্দেশ্য পূরণের পর পুনরায় আপনার দেশে ফিরে যাওয়ার সময় ভিসা ছাড়া আপনার দেশে প্রবেশ করতে পারবেন না। 

কোনভাবে ভিসাটি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে আপনাকে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে আপনার অনেক টাকা খরচও হয়ে যেতে পারে। তাই এসব ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে আপনার ভিসাটি সব সময় নিরাপদ ও সাবধানে রাখতে হবে যেন ভিসাটি কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। 

লেখকের মন্তব্য

ভিসা পাওয়ার সময়সীমা নিয়ে চিন্তা করার আগে আপনার ডকুমেন্টগুলো এবং তথ্য সঠিকভাবে দিয়েছেন কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা করেন। যদি আপনি আপনার তথ্য এবং ডকুমেন্টগুলো সঠিক এবং নির্ভুলভাবে প্রদান করেন তবে আপনি আপনার ভিসা অতি দ্রুত আপনার হাতে পেয়ে যাবেন। এবং যদি আপনার ভিসা অতি জরুরী হয় তবে আপনি জরুরী ভিসায় আবেদন করতে পারেন এক্ষেত্রে আপনি তিন থেকে চার দিনের মধ্যে আপনার ভিসাটি হাতে পেয়ে যাবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বিডি টিপস কর্নারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url