চুলের যত্নে কারি পাতার সহজ টিপস
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার একটি উপকারী ভূমিকা পালন করে। চুল হল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। স্বাস্থ্যকর ঝলমলে কালো ও ঘন চুল শুধুমাত্র আমাদের বাহ্যিক সৌন্দর্য প্রকাশ করে না বরং এটি আমাদের মনের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে অনেক সাহায্য করে।
কারি পাতা শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয় না, এটি আমাদের চুলের যত্নে অসাধারণ গুন সম্পন্ন উপাদান। কারি পাতা ব্যবহারে আমাদের চুল হবে ঝলমলে ও প্রাণবন্ত। কারি পাতায় রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও প্রোটিন যা আমাদের চুলকে ঘন ও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে সাহায্য করে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
- চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
- চুল পড়া কমাতে কারি পাতার কার্যকারিতা
- চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কারি পাতার কার্যকারিতা
- রুক্ষতা ও খুশকি দূর করতে কারি পাতার ব্যবহার
- পাকা চুল কমাতে কারি পাতার ব্যবহার
- চুলের শুষ্কতা কমাতে কারি পাতা
- চুলের ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় কারি পাতার ভূমিকা
- কারি পাতার ঘরোয়া প্যাক প্রস্তুতি
- কারি পাতা ব্যবহারে সাবধানতা
- FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।স্বাস্থ্যকর, সুন্দর,
ঝলমলে,কালো ও ঘন চুল আমাদের সকলেরই অনেক পছন্দের। আধুনিক জীবনে বিভিন্ন রকমের
চাপ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত দূষণ এবং বিভিন্ন রকম স্ট্রেসের
কারণে চুলের সমস্যার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান
ব্যবহার করে আমাদের চুলের যত্ন নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান হলো কারি পাতা।
আদিম যুগ থেকেই বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের কারি পাতার ব্যবহার হয়ে
আসছে। এটি আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাকৃতিক উপাদান।
কারি পাতা প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগ ও শারীরিক সমস্যা নিরাময়ে
ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং বর্তমানে চুলের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা
ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি
উপাদান, আয়রন, ক্যালসিয়াম,আন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের
অস্বাস্থ্যকর ও রুক্ষ চুল রোধ করে স্বাস্থ্যকর ও ঝলমলে চুল বজায় রাখতে
সহায়তা করে। এছাড়াও কারি পাতা আমাদের চুলের সমস্ত অস্বাস্থ্যকর ভাব কাটিয়ে
তুলে আমাদের চুলকে স্বাস্থ্যকর এবং ঝলমলে করে তুলতে অনেক সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃচুলের যত্নে কালোজিরা ও মেথি
চুল পড়া কমাতে কারি পাতার কার্যকারিতা
চুল পড়া একটি অতি সাধারণ সমস্যা যা আমরা তাই সবাই ভোগ করে থাকি।চুল পড়া কমাতে
বা রোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো কারি পাতা। কারি পাতায়
রয়েছে পুষ্টিগুণ যা চুলের গোড়ায় পৌঁছে চুলের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চুল পড়া
রোধ করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের চুলের শিকড় কে মজবুত করে এবং নতুন নতুন
চুল গজাতে সাহায্য করে। কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন বি যা আমাদের
চুলের শিকড়ের কোষ কে শক্ত করে এবং আমাদের চুলকে প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি
করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও কারি পাতা আমাদের মাথার ত্বক অনেক পরিষ্কার রাখে যা আমাদের চুলের
সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। কারি পাতায় থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল
উপাদান আমাদের মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল ও ময়লা উপাদান পরিষ্কার করে ফেলে যা
আমাদের চুলকে সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। আমরা যদি নিয়মিত কারি পাতা
ব্যবহার করি তবে আমাদের চুল পড়া রোধ হবে এবং নতুন চুল গজাবে।
চুল পড়া কমানোর জন্য নারিকেল তেলের সাথে কারি পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনাকে নারিকেল তেল ও কারি পাতা একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। নারিকেল তেল
ও কারি পাতা একসঙ্গে মিশে গেলে আপনাকে প্রতিদিন খুব ভালো করে মাথার ত্বকে
তেলটি মেসেজ করতে হবে। এর ফলে আপনার চুলের গোড়া অনেকটা শক্ত হবে এবং নতুন
চুল গজাতে সাহায্য করবে।
চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কারি পাতার কার্যকারিতা
কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ এবং বি যা আমাদের চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে
সাহায্য করে। নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে আমাদের চুলের বৃদ্ধি উন্নতি হতে
পারে। কারি পাতায় থাকা ভিটামিন আমাদের চুলের কোষের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি সরবরাহ
করে যা আমাদের চুলের শিকড় কে শক্তিশালী ও চুলকে সক্রিয় করে তোলে। এই পুষ্টি
উপাদানগুলো আমাদের চুল গজানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং নতুন চুল গজানোর
জন্য সাহায্য করে।
কারি পাতায় থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট মাথার ত্বককে সজীব রাখে এবং আমাদের মাথার
ত্বকের রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখে ফলে আমাদের চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি
উপাদান ও অক্সিজেন আমাদের চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এছাড়াও
কারি পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড ও মিনারেল যা আমাদের চুলের
গোড়া মজবুত করে এবং যা আমাদের চুলের রুক্ষতা কমিয়ে চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে
সহায়তা করে। প্রতিদিন নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে আপনি নিজেই নিজের চুলের
বৃদ্ধি লক্ষ্য করতে পারবেন।
চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে কারি পাতার হেয়ার মাস্কঃ প্রথমেই ১৫০-২০০
গ্রাম কারিপাতা পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পাটায় বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে
হবে। এরপর কারি পাতার সাথে মধু বা অ্যালোভেরা দুইটি উপাদানের মধ্যে যেকোনো একটি
অর্থাৎ আপনার হাতের কাছে যে উপাদানটি থাকবে সেই উপাদানটি কারি পাতার সাথে
মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। তারপর কারি পাতার হেয়ার প্যাকটি
মাথায় লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর প্যাকটি শুকিয়ে আসলে
ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এই প্যাকটি
ব্যবহার করলে আপনার চুলের বৃদ্ধি উন্নত হবে।
আরো পড়ুনঃ ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কতদিন সময় লাগে?
রুক্ষতা ও খুশকি দূর করতে কারি পাতার ব্যবহার
চুলের রুক্ষতা ও খুশকি দূর করতে কারি পাতা একটি অন্যতম প্রাকৃতিক উপাদান।
কারি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা আমাদের চুলের রুক্ষতা ও
খুশকি দূর করতে অনেক সহায়তা করে এবং আমাদের চুলকে সজীব ও মসৃণ করে তোলে। কারি
পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমাদের মাথার ত্বকের অতিরিক্ত ময়লা দূর
করে এবং আমাদের মাথার ত্বকের মৃত কোষ গুলো দূর করতে সাহায্য করে এর ফলে আমাদের
মাথার খুশকি দূর হয়ে যায়।
এছাড়াও কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন A,B এবং C যা আমাদের মাথার ত্বককে
মসৃণ ও সজীব রাখে যা আমাদের চুলের রুক্ষতা ও খুশকী কমিয়ে চুলকে সিল্কি, নরম ও
কোমল করে তোলে। কারি পাতা আমাদের চুলে শুষ্কতা দূর করার জন্য একটি প্রাকৃতিক
হাইড্রোজেন হিসেবে কাজ করে যা আমাদের চুলকে ভেতর থেকে সুস্থ ও কোমল করে
ময়শ্চারাইজ করে এবং আমাদের চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে আমাদের চুল হবে স্বাস্থ্যকর মসৃণ ও উজ্জল।
রুক্ষতা ও খুশকি দূর করতে হেয়ার প্যাকঃ পরিমাণ মতো কারি পাতা এবং পানিতে
ধুয়ে পরিষ্কার করে পাটার পিছে নিতে হবে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে
হবে। ব্লেন্ড করা কারি পাতার সাথে ৩-৪ টেবিল চামচ মেথির গুড়া মিশিয়ে
নিয়ে একটি প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এরপর গোসলের পূর্বে প্যাকটি মাথায় লাগিয়ে
২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে প্যাকটি শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর প্যাকটি
শুকিয়ে আসলে মাথায় শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। প্যাকটি আপনাকে
সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহার করতে হবে।
পাকা চুল কমাতে কারি পাতার ব্যবহার
কারি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যা আমাদের চুলের প্রাকৃতিক রং
বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি আমাদের পাকা চুলের সমস্যা কমিয়ে চুলকে কালো ও
স্বাস্থ্যকর রাখে। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকেরই পাকা চুলের সমস্যা দেখা
দিতে পারে। কিন্তু কারি পাতা একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পাকা চুলের সমস্যা
কমাতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারি পাতায় রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও
ভিটামিন B যা আমাদের চুলের স্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সাহায্য
করে।
এছাড়াও ভিটামিন B আমাদের চুলের প্রাকৃতিক রং দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে সহায়তা
করে। কারি পাতা আমাদের চুলের পিগমেন্টেশন বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এর ফলে
আমাদের পাকা চুলের প্রবণতা অনেক কমে যায়। কারি পাতায় থাকা আইরন ও ক্যালসিয়াম
চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং আমাদের রুক্ষ ও পাকা চুলের সংখ্যা কমিয়ে আনতে
কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারি পাতা নারিকেল তেলের সাথে ব্যবহার করলে এটি
আমাদের পাকা চুল কমিয়ে প্রাকৃতিক রং বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
পাকা চুল কমাতে কারি পাতার তেলঃ প্রথমেই পরিমাণ মতো কিছু কারি পাতা পরিষ্কার
পানিতে ধুয়ে পাটায় পিষে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে নিতে হবে। এরপর
একটি পরিষ্কার পাত্রে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল চুলায় বসিয়ে হালকা গরম করে নিতে
হবে। তারপর ব্লেন্ড করে রাখা কারি পাতাগুলো নারিকেল তেলের মধ্যে দিয়ে কিছুক্ষণ
জ্বাল করে নিতে হবে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে একটি কাচের বোতলে
তেলটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। প্রতিদিন কারি পাতার তেলটি নিয়মিত ব্যবহার করলে
আপনার চুলের শিকড় মজবুত হবে এবং পাকা চুলের প্রবণতা কমে যাবে।
আরো পড়ুনঃ কুয়েত ভিসা হতে কতদিন সময় লাগে
চুলের শুষ্কতা কমাতে কারি পাতা
চুলের শুষ্কতা সমস্যা আমাদের অনেকেরই রয়েছে ।এটি একটি স্বাভাবিক সমস্যা এবং কারি
পাতা চুলের শুষ্কতা কমাতে সহায়তা করে। কারি পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং
কারি পাতা থেকে তৈরিকৃত প্রাকৃতিক তেল চুলকে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
শুষ্ক চুলের ফলে আমাদের চুল রুক্ষ ও ড্যামেজ হতে পারে। চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার আমাদের চুলের
শুষ্কতা কমাতে ও দূর করতে একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। কারি
পাতা থেকে তৈরি কৃত প্রাকৃতিক তেল এবং এটিতে থাকা ভিটামিন A,B এবং
C আমাদের চুলের রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব দূর করে চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা
বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কারি পাতায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান অর্থাৎ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি এসিড
আমাদের চুলকে ভেতর থেকে কোমল এবং ময়েশ্চারাইজ করে তোলে। কারি পাতা ব্যবহারে
আমাদের মাথার ত্বকের ময়লা দূর করে আমাদের মাথার ত্বককে পুষ্টি সরবরাহ করতে
সাহায্য করে চুলকে সিল্কি ও মসৃণ রাখতে সাহায্য করে। কারি পাতা দিয়ে
তৈরি করা তেল ব্যবহারে চুলের শুষ্কতা দূর করে চুলকে নরম ও উজ্জ্বল করে
তোলে।
চুলের শুষ্কতা কমাতে কারি পাতার তেলঃ একটি বাটিতে পরিমাণ মতো কিছু কারি পাতা
পানিতে ধুয়ে পাটায় পিষে নিতে হবে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর
পরিমাণমতো অলিভ অয়েল একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে চুলায় বসিয়ে হালকা গরম করে
নিতে হবে। তেলটি হালকা গরম হলে তেলের মধ্যে পিষে রাখা কারি পাতাগুলো তেলের মধ্যে
ঢেলে কিছুক্ষণ জ্বাল করে নিতে হবে। এরপর কারি পাতার তেলটি চুলা থেকে নামিয়ে
ছাকনি দিয়ে থেকে একটি পরিষ্কার কাচের বোতলে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এই
তেলটি নিয়মিত মাথার ত্বকে লাগিয়ে মেসেজ করুন এবং এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে
ধুয়ে ফেলুন।
চুলের ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় কারি পাতার ভূমিকা
চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অর্থাৎ চুলকে ঝলমলে, স্বাস্থ্যকর, নরম ও কোমল রাখার জন্য
মাথার ত্বক অনেক ভূমিকা পালন করে। কারি পাতা ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বক
পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবান থাকে যা আমাদের চুলকে বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। কারি
পাতা আমাদের মাথার ত্বকে কোনরকম ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে দেয় না এবং আমাদের
চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করে। কারি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের
পুষ্টির উপাদান যেমন-ভিটামিন, মিনারেলস, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা আমাদের মাথার ত্বকের ময়লা দূর করে এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা
করে।
কারি পাতায় থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আমাদের মাথায় ত্বক পরিষ্কার রাখতে
সাহায্য করে এবং আমাদের মাথার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ফলে আমাদের চুলের পুষ্টি গুণ ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও কারি পাতা থাকা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ আমাদের চুল পড়া রোধ করে এবং
আমাদের চুলকে সুস্থ, মসৃণ, নরম ও সিল্কি রাখে। নিয়মিত কারি পাতার ব্যবহারে
আমাদের চুলের স্বাস্থ্য বজায় থাকে যা দীর্ঘ মেয়াদী চুলের শক্তি
পুষ্টিগুণ ও সুস্থতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
কারি পাতার ঘরোয়া প্যাক প্রস্তুতি
আমরা অনেকেই বাড়িতে থাকা কিছু উপকরণ দিয়ে অর্থাৎ ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে আমাদের
চুলের পরিচর্যা করে থাকি। তবে কম খরচে ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে আমাদের চুলের সমস্যার
তেমন একটা সমাধান সম্ভব হয় না। কিন্তু কারি পাতা এমন একটি উপাদান যা সম্পূর্ণ
প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং আমাদের চুলের সকল সমস্যার সমাধান
হিসেবে কাজ করে। তাই আমরা খুব সহজেই কারি পাতা ও ঘরোয়া কিছু উপকরণ দিয়ে হেয়ার
প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করে আমাদের চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান পেতে
পারি।
কারি পাতার ঘরোয়া প্যাক প্রস্তুত করার জন্য প্রথমে পরিমাণ মতো কিছু কারি পাতা
পানিতে ধুয়ে পাটায় পিষে অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর একটি
পরিষ্কার বাটিতে ব্লেন্ড করা কারিপাতা,২ টেবিল চামচ মধু এবং ২ টেবিল চামচ
অ্যালোভেরা একসঙ্গে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এরপর প্যাকটি
গোসলের পূর্বে মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।
তারপর প্যাকটি শুকিয়ে আসলে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
এভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন প্যাকটি ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার বিভিন্ন ভাবে হেয়ার প্যাক অথবা তেল তৈরি করে করা যায়।
কারি পাতা ব্যবহারে সাবধানতা
কারি পাতা সাধারণত রান্নার স্বাদ ও চুলের উপকারী কার্যকরী উপাদান হলেও এর
ব্যবহারে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য
অতিরিক্ত পরিমাণে কারি পাতা খাওয়া ও চুলে ব্যবহার করা ক্ষতিকর হতে পারে কারণ এটি
শরীরের উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তবে সঠিক মাত্রায় কারি পাতা খেলে বা চুলের ত্বকে
ব্যবহার করলে তেমন কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এছাড়াও অতিরিক্ত পরিমাণে কারি পাতা খেলে বা চুলের ত্বকে মাখলে জ্বালাপোড়া ভাব
বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। আমাদের সকলের ত্বক বা স্কিন
একরকম নয়, তাই কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কারি পাতার ব্যবহারে এলার্জিক
প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন-ত্বকে র্যাশ বা চুলকানি দেখা দিতে
পারে এক্ষেত্রে কারি পাতার ব্যবহারে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। যাদের
ডায়বেটিক্স বা এলার্জিক প্রবলেম রয়েছে তাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কারি
পাতার ব্যবহার করতে হবে।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ কারি পাতা চুলে কিভাবে ব্যবহার করতে হয়?
উত্তরঃ কারি পাতা আমাদের চুলের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক উপাদান।
অনেকভাবে কারি পাতা চুলে ব্যবহার করা যায় যেমন-কারি পাতার তেল তৈরি করে, কারি
পাতা ও মেথির হেয়ার প্যাক তৈরি করে এবং কারি পাতার ঘরোয়া উপায় প্যাক তৈরি
করে।
প্রশ্নঃ চুল গজানোর জন্য কারি পাতা ও মেথির ব্যবহার?
উত্তরঃ চুল গজানোর জন্য কারি পাতা ও মেথি অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। চুল
গজানোর জন্য কারি পাতা ও মেথির হেয়ার প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে।
কারি পাতা ও মেথি হেয়ার প্যাক চুল গজাতে সহায়তা করে।
প্রশ্নঃ কারি পাতার রস চুলে দিলে কি হয়?
উত্তরঃ কারি পাতার রস চুলে দিলে চুল ভেতর থেকে স্বাস্থ্যকর ও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
কারি পাতার রস চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, চুলের রুক্ষ ও
শুষ্কতা দূর করে চুলকে নরম কোমল ও সিল্কি করতে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ কারি পাতার হেয়ার মাস্ক কিভাবে ব্যবহার করবেন?
উত্তরঃ কারি পাতার হেয়ার মাস্ক প্রতিদিন নিয়মিত গোসলের পূর্বে চুলের ত্বকে
ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে এবং ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর মাস্কটি
শুকিয়ে আসলে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে গোসল করে নিতে হবে। ভালো
ফলাফলের জন্য এভাবে সপ্তাহে ৩-৪ দিন মাস্কটি ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্নঃ চুল গজানোর জন্য কোন পাতা ভাল?
উত্তরঃ চুল গজানোর জন্য কারি পাতা হল একটি প্রাকৃতিক উপাদান। কারি পাতাতে থাকা
ভিটামিন, মিনারেল, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুল গজাতে কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে এবং চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে।
লেখকের মন্তব্যঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার অতি গুরুত্বপূর্ণ।কারি পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের চুলের ত্বকের অতিরিক্ত ময়লা দূর করে চুলের গোড়ায়
পুষ্টি সরবরাহ করে এবং রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে। তবে কারি
পাতার ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে ব্যবহার করা উচিত এবং যাদের উচ্চ
রক্তচাপ ও এলার্জিক সমস্যা রয়েছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা
উচিত।
আমাদের জানা উচিত সকল প্রাকৃতিক উপাদানের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আমাদের ওপর
ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। এই কনটেন্টি যদি আপনার ভালো লেগে
থাকে এবং যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে এটি আপনার আত্মীয়-স্বজন ও
বন্ধু-বান্ধবের নিকট শেয়ার করতে পারেন। যাতে তারা কনটেন্টটি পরে উপকৃত হতে
পারে।
বিডি টিপস কর্নারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url