গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিস্তারিত জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা একটি নারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় প্রতিটি নারী জীবনে মহামূল্যবান ও সংবেদনশীল অধ্যায়। এই সময় মা ও গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নির্ভর করে সঠিক যত্ন, পুষ্টি ও সচেতনতার ওপর। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কারণ এই সময়ে গর্ভে শিশুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হতে শুরু করে।
গর্ভাবস্থায় সামান্য ও সাবধানতা ও গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সময়টিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। প্রথম তিন মাসে অনেক মা গর্ভকালীন সাধারণ উপসর্গ যেমন- বমি ভাব ,দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি সম্মুখীন হন যা স্বাভাবিক হলেও মাঝে মাঝে জটিল সমস্যার পূর্বাভাসও হতে পারে।
পোস্ট সূচীপত্রঃগর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
- গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
- নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করুন
- পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য খাওয়া নিশ্চিত করুন
- ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
- মানসিক চাপ কমান ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখুন
- পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন
- যেকোন ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- বমি ও গর্ভকালীন অস্বস্তিকে গুরুত্ব দিন
- FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
- লেখকের মন্তব্য: গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সর্তকতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা মাতৃ-স্বাস্থ্য ও ভ্রুনের বিকাশের জন্য
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। এই সময়ে ভ্রুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত
হয় ফলে কোন অসাবধানতা ভবিষ্যতে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই পর্যায়ে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গর্ভবতী
মায়ের জন্য অপরিহার্য। পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে যাতে প্রোটিন,
আয়রন ,ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড এবং অন্যান্য ভিটামিন খনিজ যথাযথ পরিমাণে থাকে।
বিশেষ করে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ ভ্রূণের মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের সঠিক গঠনের জন্য
খুবই অপরিহার্য। এছাড়া পর্যাপ্ত পানি পান ও ঘুম দরকার।
গর্ভাবস্থায় শুরুতেই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত চেকআপ
করানো, আল্ট্রা সাউন্ড এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলির সময় মত করানো ভ্রুনের
স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের সহায়ক। যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের
পরামর্শ নিতে হবে কারণ কিছু ওষুধ ভ্রুনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মানসিক
স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরী। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ
এড়িয়ে চলা উচিত কারণ এটি ভ্রুনের বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রয়োজনে পরিবার ও
বন্ধুদের সহযোগিতা নিতে হবে।
ধূমপান, মদ্যপান বা যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ রূপে পরিহার করা উচিত। এই
অভ্যাসগুলো ভ্রুনের বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও হালকা ব্যায়াম,
মেডিটেশন ও বিশ্রাম গর্ভবতী মায়ের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখে। গর্ভাবস্থার প্রথম
তিন মাসের সঠিক সচেতনতা ও যত্ন গর্ভকালীন জটিলতা হ্রাস করে এবং এটি সুস্থ
সন্তানের জন্ম নিশ্চিত করতে সহায়ক হয়।
নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করুন
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা শুরু থেকে নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করা
একটি নিরাপদ এবং সুস্থ গর্ভকালীন সময় নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে ভ্রুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠনের সময় হওয়ায় যে কোন
জটিলতা এড়াতে সঠিক ও সময় মত চিকিৎসা নিদর্শনা মেনে চলা জরুরী। গর্ভধারণ নিশ্চিত
হওয়ার পর একজন গাইনোকলজিস্ট বা প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
চিকিৎসক-প্রাথমিকভাবে কিছু রুটিন পরীক্ষা যেমন-ব্লাড টেস্ট, ইউরিন
টেস্ট,আলট্রাসাউন্ড ইত্যাদি নির্ধারণ করে থাকেন যা গর্ভাবস্থার অবস্থা ও ভ্রুনের
স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।
এছাড়া রোগী যদি ডায়াবেটিক্স, উচ্চ রক্তচাপ বা থাইরয়েড সমস্যার মত কোন
পূর্ববর্তী অসুস্থতায় ভোগেন তাহলে চিকিৎসক সে অনুযায়ী বিশেষ পরামর্শ দেন। এ
সময়ে ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম এর মত গুরুত্বপূর্ণ সাপ্লিমেন্ট সঠিক
মাত্রায় গ্রহণ নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের নির্দেশনা অপরিহার্য। চিকিৎসকের পরামর্শ
ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ, ভিটামিন বা হারবাল চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত নয় কারণ কিছু
ওষুধ বা উপাদান ভ্রুনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাছাড়া অনেক সময় গর্ভাবস্থায় শুরুর দিকে হালকা রক্তপাত,তীব্র বমি, পেটে ব্যথা
বা দুর্বলতা দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে তা গর্ভপাত বা জটিল গর্ভকালীন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে
যেতে পারে। সুতরাং নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ গর্ব অবস্থায় জটিলতা প্রতিরোধ মা ও
সন্তানের সুস্বাস্থ্য এবং নিরাপদ প্রসব নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। গর্ভকালীন
সময়ে সচেতনতা ও চিকিৎসা সহযোগিতা মিলেই হয় সুস্থ মাতৃত্বে প্রথম পদক্ষেপ।
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য খাওয়া নিশ্চিত করুন
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে পুষ্টিকর ও সুসাম্য খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি কারণ
এই সময়েই ভ্রুনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন শুরু হয় এবং গর্ভবতী মায়ের শরীরে ও নানা
শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। পর্যাপ্ত সঠিক পুষ্টি না পেলে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য
ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শুরু থেকেই খাদ্যাভ্যাসের সচেতনতা বজায় রাখা খুব
গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য বলতে বোঝায় এমন একটি খাদ্য তালিকা যাতে
প্রোটিন,শর্করা,চর্বি,ভিটামিন,খনিজ পদার্থ এবং পানি সঠিক অনুপাতে থাকে।
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন ভিত্তিক খাবার যেমন-ডিম,মাছ,মাংস,ডাল এবং দুধজাত খাবার
ভ্রুনের কোষ গঠনে সাহায্য করে।
এছাড়া আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন-পালং শাক,কলা,খেজুর,কলিজা ইত্যাদি রক্তশূন্যতা
প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফলিক অ্যাসিড একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা
ভ্রুনের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের সহায়ক। এটি শাকসবজি বিভিন্ন
ফলমূল ডিম এবং সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও পাওয়া যায়। এছাড়া ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি
শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পানি ও তরল খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে
খাওয়া জরুরী কারণ এটি শরীরকে হাইডেটেড রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
এই সময় বাইরের তেল ঝাল খাবার কাঁচা বা অপরিচ্ছন্ন খাবার এবং ক্যাফেন যুক্ত
পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। শিকড় খাবার না শুধু মায়ের শক্তি ও
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বরং একটি সুস্থ ও পরিপূর্ণ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করে। তাই
গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই সুষম ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস গড়ে তোলা উচিত।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা হল ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনের
গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় যে কোন ধরনের ক্ষতিকর অভ্যাস বিশেষ করে ধূমপান ও
মদ্যপান ভ্রুনের স্বাভাবিক বিকাশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই
গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই এ ধরনের অভ্যাস থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরী।
ধূমপানের ফলে শরীরে নিকোটিন কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক
প্রবেশ করে যা ভ্রুনের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত করে। এতে শিশুর কম ওজন নিয়ে
জন্ম,অকাল প্রসব,এমনকি গর্ভপাতের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
এছাড়া মায়ের ধূমপানের কারণে শিশুর পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট,এলার্জি এবং আচরণগত
সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। সক্রিয় ধূমপান নয় প্যাসিভ স্মোকিং অর্থাৎ
আশপাশের কেউ ধূমপান করলে তার ধোয়াও মায়ের ও ভ্রুনের জন্য ক্ষতিকর। মদ্যপান
গর্ভস্থ শিশুর জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর। অ্যালকোহল সরাসরি প্লাসেন্টা পেরিয়ে
ভ্রুনের শরীরে পৌঁছায় এবং তার মস্তিষ্কতন্ত্রের বিকাশ ব্যাহত করে। গর্ভাবস্থায়
মদ্যপান অ্যালকোহল সিনড্রোম নামক এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে যার ফলে শিশু
শারীরিক মানসিক ও আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাই গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়ে ধূমপান বা মধ্যপান কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। যদি
এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে সমস্যা হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও মানসিক সহযোগিতা
নেওয়া উচিত। একটি সুস্থ, নিরাপদ ও সুন্দর মাটিতে নিশ্চিত করতে অবশ্যই এসব
ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন।
মানসিক চাপ কমান ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখুন
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের শরীরের পাশাপাশি মনের অবস্থারও পরিবর্তিত হয়।
হরমোন জনিত তারতম্য,শারীরিক অস্বস্তি এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্যোগ এসব
নিয়ে অনেক নারী মানসিক চাপে ভোগেন। তবে এ সময় অতিরিক্ত মানসিক চাপ ভ্রুনের
স্বাভাবিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ
কমানো ও ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত
দুশ্চিন্তা,হতাশা বা উদ্বেগ মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক
চাপের কারণে শরীরে করটিসল নামক এক হরমোন এর মাত্রা বেড়ে যায় যা গর্ভস্থ শিশুর
মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দিতে পারে।
অনেক সময় এটি অকাল প্রসব,শিশুর কম ওজন নিয়ে জন্ম অথবা পরবর্তীকালে শিশুর
আচরণগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই চাপ কাটিয়ে উঠতে পরিবার ও কাছের
মানুষদের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী মা যেন ভালোবাসা,সহানুভূতি ও
বোঝাপড়ার পরিবেশে থাকতে পারেন তা নিশ্চিত করা দরকার। পাশাপাশি হালকা ব্যায়াম,
মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রিত অনুশীলন এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ
কমাতে সাহায্য করে। প্রয়োজনে কাউন্সিলরের এর সাহায্য নেওয়া ও বুদ্ধিমানের
কাজ।
এছাড়া বই পড়া,গান শোনা,প্রকৃতির সমৃদ্ধ সময় কাটানো এবং নিজের পছন্দের কাজগুলোর
সঙ্গে যুক্ত থাকা মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলে মনে রাখতে হবে একজন খুশি ও
মানসিকভাবে সুস্থ মা একটি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। তাই গর্ভাবস্থায়
মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখা শুধু মায়ের জন্য নয় ভ্রূণের সুস্থ বিকাশের জন্য
অত্যন্ত জরুরী।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিন
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের শরীর ও মনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যায় একজন নারীর
জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্তিকর হতে পারে। এ সময় ভ্রুনের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ
গঠিত হয় এবং শরীর হরমনের নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। তাই এই সময় পর্যাপ্ত
ঘুমো বিশটা অত্যন্ত জরুরী কারণ এটি শুধু মায়ের সুস্থতা নিশ্চিত করে না বরং
ভ্রুনের সুষ্ঠু বিকাশেও সহায়তা করে। গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে প্রোজেস্টেরন
হরমোন এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা নারীদের আরও ঘুম পেতে সাহায্য করে তবে একইসঙ্গে
ক্লান্তিও পারে।
অনেক সময় সকালে উঠে বমি ভাব,দুর্বলতা বা মাথা ঘোরার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
তাই শরীরে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত। দিনে অন্তত আট থেকে নয়
ঘন্টা রাতের ঘুম এবং প্রয়োজনে দিনে কিছুক্ষণ ঘুম বা বিশ্রাম শরীরকে চাঙ্গা করে
তোলে। বিশ্রাম কেবল শারীরিক ক্লান্তি দূর করেনা মানসিক প্রশান্ত এনে দেয়। মানসিক
চাপ কমাতে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। যারা
ঘুমের সমস্যা ভোগেন তারা ঘুমের আগে হালকা গরম দুধ পান,বই পড়া বা ধ্যানের মতো
শান্তিময় কাজ করতে পারেন।
পাশাপাশি বিশ্রামের সময় সঠিক শোয়ার ভঙ্গি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বাঁ
দিকে কাত হয়ে শোয়া রক্ত সঞ্চালনের জন্য ভালো এবং এটি ভ্রুনের জন্য উপকারী।
গর্ভাবস্থায় এই স্পর্শকাতর সময় শরীর ও মনের জাগরণে পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ মা ও সুস্থ শিশুর জন্য এটি এক অপরিহার্য
অভ্যাস।
যেকোন ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা হল শিশুর জীবনের ভিত্তি স্থাপনের সময়। এই
সময়ে ভ্রুনের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হয় তাই কোন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান বা ওষুধ
গ্রহণের ভ্রুনের স্বাভাবিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময়
আমরা সাধারণ অসুস্থতা যেমন-ঠান্ডা মাথা ব্যথা বা হালকা জ্বরের জন্য ওষুধ গ্রহণ
করি যা সাধারনত অবস্থায় ক্ষতিকর না হলেও গর্ভাবস্থায় তা বিপদজনক হয়ে উঠতে
পারে। তাই গর্ভাবস্থায় শুরু থেকেই যে কোন ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনেকে ধারণা করেন যে গ্যাসের সমস্যা বা হালকা ব্যথার জন্য ওষুধ খাওয়াই কোন
সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবে কিছু সাধারণ ওষুধ যেমন-পেইনকিলার,এন্টিবায়োটিক বা
অ্যাসিটি নিরোধক ঔষধ গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধা দিতে পারে যা জন্মগত ত্রুটির
ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়া যেসব মায়ের পূর্ব থেকে থাইরয়েড,ডায়াবেটিস বা
উচ্চ রক্তচাপের মত দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ওষুধ বাছায় আরো বেশি
সাবধানতার দাবি রাখে। চিকিৎসক মায়ের শারীরিক অবস্থা ও গর্ভাবস্থার সময়কাল
অনুযায়ী ঔষধের মাত্রা ও উপযোগী নির্ধারণ করেন।
অনেক সময় বিকল্প ওষুধ ব্যবহার বা ডোজ পরিবর্তনের মাধ্যমে শিশুর ক্ষতির সম্ভাবনা
কমিয়ে আনা যায়। তাই গর্ভাবস্থায় নিজের ইচ্ছামত বা পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী
ওষুধ খাওয়া একেবারেই অনুচিত। একজন সচেতন মা হিসেবে নিজের এবং অনাগত সন্তানের
সুস্থতার জন্য ওষুধ গ্রহণের সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করাই সবচেয়ে নিরাপদ
পথ।
বমি ও গর্ভকালীন অস্বস্তিকে গুরুত্ব দিন
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের বমি ও নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থ খুব সাধারণ একটি
উপসর্গ যা অধিকাংশ গর্ভবতী নারী অভিজ্ঞ হন। যদিও এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া
তবে অনেক সময় অতিরিক্ত বমি বা অস্বস্তি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই এই
ধরনের উপসর্গকে হালকাভাবে না নিয়ে গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা
উচিত। সকালে বমি বা মর্নিং সিকনেস হল গর্ভাবস্থায় একেবারে শুরুতে দেখা দেওয়া
সাধারণ লক্ষণ। এটি মূলত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে দিনের যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে।
অনেক মা শুধু হালকা বমি ভাব অনুভব করেন আবার কেউ কেউ দিনে কয়েকবার বমি করেন যা
শারীরিক দুর্বলতা ও পানিসূন্যতার কারন হতে পারে। যদি বমি মাত্রা অতিরিক্ত হয়
খাওয়া দাওয়া বা পানি পান সম্ভব না হয় তাহলে তা হাইপারমেসেজ গ্রাভিডারাম
নামে পরিচিত হতে পারে যা চিকিৎসার প্রয়োজন। অতিরিক্ত বোমের ফলে শরীর থেকে
প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ পদার্থ বেড়িয়ে যায় যা মা ও শিশুর উভয়ের জন্য
ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় অম্বল,মাথা ঘোরা,দুর্বলতা,খাবারে অরুচি,ঘুমের সমস্যা
ইত্যাদি অস্বস্তি হতে পারে। এসব সমস্যা নিয়মিত চিকিৎসকে জানানো উচিত এবং
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সুতরাং গর্ভাবস্থায় বমি ও অস্বস্তি কে গুরুত্ব দিয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পুষ্টিকর
খাবার হচ্ছে কিছুকে নির্দেশনা অনুযায়ী চলা জরুরী। সচেতনতা ও যত্নই পারে
গর্ভকালীন এই স্বাভাবিক সমস্যা থেকে জটিলতা রোধ করতে।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: গর্ভাবস্থার শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ কবে নেওয়া উচিত
উত্তর: গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়ার পর পরই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত
প্রশ্ন: প্রথম তিন মাসে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত
উত্তর: পুষ্টিকর সুষম ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত
প্রশ্ন: ধূমপান গর্ভস্থ শিশুর উপর কি প্রভাব ফেলে
উত্তর: ধূমপান শিশু বিকাশে বাধা দেয় এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়
প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় কি ঘুম বেশি দরকার
উত্তর: হ্যাঁ দিনে অন্তত 8-9 ঘন্টা ঘুম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম দরকার
প্রশ্ন: বমি বেশি হলে কি করা উচিত
উত্তর: প্রচুর পানি পান করুন এবং অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসকের কাছে যান
প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় ওষুধ খাওয়া কি নিরাপদ
উত্তর: না চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ খাওয়া উচিত নয়
প্রশ্ন: মানসিক চাপ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে কি
উত্তর: হ্যাঁ অতিরিক্ত মানসিক চাপ শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে
প্রশ্ন: কি ধরনের ব্যায়াম করা নিরাপদ
উত্তর: হালকা হাটা ও সহজ যোগ ব্যায়াম চিকিৎসকের পরামর্শ করতে পারেন
প্রশ্ন: গর্ভাবস্থায় ভ্রমণ করা কি ঠিক
উত্তর: প্রথম তিন মাসে দূর ভ্রমণ এড়িয়ে চলা উত্তম
প্রশ্ন: কি কারনে প্রথম তিনবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
উত্তর: এ সময় ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠিত হয় তাই বাড়তি সতর্কতা দরকার
লেখকের মন্তব্য: গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩ মাসের সতর্কতা একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে সংবেদনশীল ও
গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় ভ্রূণের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়
এবং মায়ের দেহেও নানা হরমোনজনিত ও শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। তাই এই সময়ে বাড়তি
সতর্কতা সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ অপরিহার্য। পুষ্টিকর
খাবার,পর্যাপ্ত ঘুম,মানসিক প্রশান্তি এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভ্যাস যেমন ধূমপান
ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা গর্ভাবস্থাকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে সহায়ক। যেকোনো
শারীরিক অসুস্থকে অবহেলা না করে গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের
শরণাপন্ন হওয়ায় একটি সুস্থ সন্তান জন্মের ভিত্তি তৈরি করে। অতএব প্রতিটি মা ও
তার পরিবারকে এই সময়ে সতর্ক ও সহানুভূতিশীল ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।
প্রিয় পাঠক, আশা করি এই কনটেন্টটি পড়ে আপনার ভালো লাগবে এবং এই কনটেন্ট টি
দ্বারা আপনি উপকৃত হতে পারবেন। যদি এই কনটেন্টটি মাধ্যমে আপনি উপকৃত হতে পারেন
তবে এই কনটেন্টটি আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট শেয়ার করতে
পারেন যাতে তারা এই কনটেন্টটি পড়ে উপকৃত হতে পারে।
বিডি টিপস কর্নারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url